সিলেটের পাহাড় চূড়ায় শুকতারা


প্রায় সাত একরের ছোট্ট একটি পাহাড়। উদ্দীনের টিলা নামেই বেশি পরিচিত। চূড়ায় উঠলে যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। খাদিম আর বরজানের চা বাগান, একটু পেছনে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান আর সবশেষে দূর বহুদূরে দৃষ্টিসীমা আটকে দেওয়া খাসিয়া-জৈনি-য়া পাহাড়ের আকাশ ছোঁয়া দেয়াল। অন্যদিকটায় দেখা যায় সুরমার জলধারা, আরেক দিকে দিন-রাত পাহাড়ের বাঁকে উঁকি মেরে জ্বলে চলা আলুটিলা গ্যাসফিল্ডের মশাল। চারিদিকে সবুজে গেলা প্রান-রের মাঝে পাহাড় চূড়ায় এক টুকরা স্বর্গ শুকতারা প্রকৃতি নিবাস।
শাহজালাল, শাহপরানের পূণ্যভূমি সিলেট শহর থেকে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরেই এর অবস'ান। সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে শাহ্‌পরাণ (রহ:)-এর মাজার ছেড়ে একটু সামনে বামে ছোট সড়কে মোড় নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার এগুলেই শুকতারার দুয়ার। 
এখানে পাহাড়ের পায়ের কাছে গিয়ে গাড়ি ছেড়ে উপরে উঠতে হবে। সর্পিল আঁকাবাঁকা সান বাঁধানো পথ উপরে উঠে গেলেও গাড়ি ওঠানোর অনুমতি নেই। তবে ভয়েরও কিছু নেই। শুকতারার ট্রেন কিংবা গলফ কার্ট সুউচ্চ টিলার গা বেয়ে সোজা পৌঁছে দেবে অভ্যর্থনা গৃহের সামনে। পাহাড়ের গাছগাছালির আড়ালে চারতলাবিশিষ্ট এ বাড়িটির তৃতীয় তলায় সাজানো গোছানো অভ্যর্থনা আর লাউঞ্জ। পাশেই পাঠাগার। চায়ের দেশ সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য, আর ভ্রমণের বই-ই এর মূল বিষয়। এর এক ছাদ নিচেই রেসে-ারা একাশিয়া। একেবারে ভিন্ন এক পরিবেশে অসাধারণ সুস্বাদু সব খাবার এখানকার। পাশেই সভাকক্ষ। চল্লিশজন একসঙ্গে সভা করতে পারবেন এখানে। একেবারে নিচের তলায় আছে ছোট একটি হোম থিয়েটার। এ ভবনটিতে স'ান পেয়েছে নানা করম শিল্পকর্ম, চিত্রকর্ম আর আলোকচিত্র। 
অভ্যর্থনা থেকে সামান্য দূরত্বে পাহাড়ের উপরে শুকতারার প্রকৃতি নিবাষ। এ পথের শুরুতেই ‘পাখিনীড়’ নামে শিল্পী অলক রায়ের শিল্পকর্ম। এখান থেকে উপরে কর্টেজের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে সিলেটের চারপাশের বড় একটা অংশই চোখে ধরা দেয়। কর্টেজগুলোর ভেতরের সৌন্দর্য বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই। প্রতিটি কক্ষের ছাদ পর্যন- কাঁচের দেয়াল। মোটা পর্দা সরিয়ে দিলে ঘরে বসেই পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় সহজেই। প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া বারান্দা। ভেতরের আসবাব বেতের তৈরি, কাঠের মেঝে আর পরিচ্ছন্ন বিছানা। গোসলখানায় সার্বক্ষণিক গরমজল আসে সৌরচালিত গিজার থেকে। 
শুকতারা প্রকৃতি নিবাসের চারপাশেই আছে বেশকিছু অসাধারণ বেড়ানোর জায়গা। খাদিম চা বাগান, বরজান চা বাগান, শাহ্‌ বদরের মাজার, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, শাহ্‌পরান (রহ.), শাহজালাল (রহ.) মাজার, রাতারকুল জলের বন, সারি নদী, লালা খাল, জৈন-া রাজবাড়ি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিত্যক্ত বিমানবন্দর, জাফলং, সারি নদী, লালাখাল ইত্যাদি। এসব জায়গায় বেড়ানোর জন্য শুকতারার আছে অভিজ্ঞ গাইড আর বিভিন্ন প্যাকেজ।