আমরা অনেকেই ভুলে গেছি অথবা এখনও জানিনা আমাদের সংগ্রহে কত মহামূল্যবান সম্পদ রয়েছে। আমাদের অর্জিত মহামূল্যবান সম্পদগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম যে প্রতিচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠে সেটি আমাদের জাতীয় পতাকা। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত আর ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে সেটি আমরা অর্জন করেছিলাম।
সবুজ আয়তক্ষেত্রের মধ্যে লাল বৃত্ত বাংলাদেশের প্রতীক, জাতীয় পতাকা হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পেয়েছিল। বাংলাদেশের প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে সবুজ এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীর লাল রক্ত ও উদিয়মান সূর্য চিহ্নিত করে
লাল বৃত্তটি। ১৭ই জানুয়ারি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে সরকারিভাবে গৃহিত হয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ব্যবহৃত পতাকার উপর ভিত্তি
করে এই পতাকা নির্ধারণ করা হয়। তখন লাল বৃত্তের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র ছিল। পরবর্তীতে পতাকাকে সহজ
করার লক্ষে মানচিত্রটি বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সাথে জাপানের জাতীয় পতাকার
মিল রয়েছে। পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশের সবুজের স্থলে জাপানীরা সাদা ব্যবহার করে। উড়ন্ত
অবস্থায় পতাকার বৃত্তটি মাঝখানে দেখার জন্য লাল বৃত্তটি একপাশে একটু চাপানো হয়েছে।
বাংলাদেশের আদি পতাকাটি এঁকেছিলেন বাংলাদেশ
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ছাত্র শিবনারায়ণ দাশ। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আ.স.ম. আব্দুর রব প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
২৩শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণার প্রাক্কালে তার বাসভবনে পতাকা উত্তোলন
করেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার কামরুল হাসানকে ১৯৭২ সালে শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইনকৃত
পতাকার মধ্যে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ, রং ও তার ব্যাখ্যা সম্বলিত একটি প্রতিবেদন
দিতে বলেন। কামরুল হাসান দ্বারা পরিমার্জিত রূপটিই বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা
হিসেবে গৃহিত।
পতাকার মাপ :
১. বাংলাদেশের পতাকা আয়তাকার।
২. এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬ এবং মাঝের লাল বর্ণের বৃত্তটির ব্যাসার্ধের
দৈর্ঘ্য পাঁচ ভাগের এক ভাগ, পতাকার দৈর্ঘ্যের
কুড়ি ভাগের বাম দিকের নয় ভাগের শেষ বিন্দুর ওপর অঙ্কিত
লম্ব এবং প্রস্থের দিকে মাঝখান বরাবর অঙ্কিত সরল রেখার ছেদ বিন্দু হলো বৃত্তের কেন্দ।
৩. পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট হলে প্রস্থ হবে ৬ ফুট, লাল বৃত্তের ব্যাসার্ধ হবে
২ ফুট, পতাকার দৈর্ঘ্যের সাড়ে ৪ ফুট ওপরে
প্রস্থের মাঝ বরাবর অঙ্কিত আনুপাতিক রেখার ছেদ বিন্দু হবে লাল বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু।
পতাকা ব্যবহারের মাপ :
১. ভবনে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো-
১০
ফুট, ৬ ফুট, ৫ ফুট, ৩ ফুট, ২.৫ ফুট, ১.৫ ফুট।
২. মোটরগাড়িতে ব্যবহারের জন্য পতাকার বিভিন্ন মাপ হলো-
১৫
ইঞ্চি, ৯ ইঞ্চি, ১০ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি।
৩. আন-র্জাতিক ও দ্বি-পাক্ষিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য টেবিল পতাকার মাপ
হল-
১০
ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি।
পতাকার ব্যবহারবিধি :
১. বিভিন্ন জাতীয় দিবসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, বাংলাদেশ কুটনৈতিক মিশন ও কনস্যুলেটে পতাকা উত্তোলন করতে হবে।
২. শোক দিবসে পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। পতাকার অর্ধনমিত রাখার ক্ষেত্রে প্রথমে
পতাকা শীর্ষস্থান পর্যন্ত ওঠাতে হবে। তারপর
অর্ধনমিত অবস্থানে রাখতে হবে। দিনের শেষে পতাকা
নামানোর সময় পুণরায় শীর্ষস্থান পর্যন্ত উঠিয়ে
তারপর নামাতে হবে।
৩. সরকারের অনুমতি ব্যতীতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা যাবে না।
৪. জাতীয় পতাকার ওপর কিছু লেখা অথবা মুদ্রণ করা যাবে না। এমনকি কোনো অনুষ্ঠান
উপলক্ষে কিছু আঁকা যাবে না।
পোষ্টটিতে ভূল-ভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর
দৃষ্টিতে বিবেচনা করে ভূল-ত্রুটিগুলো জানাবেন-